বিকাশ ডিপিএস কি, কিভাবে একটি বিকাশ ডিপিএস একাউন্ট খুলবেন, বিকাশ ডিপিএস এর মুনাফার হার, ডিপিএস করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে, DPS এর টাকা কিভাবে উত্তোলন করবেন অথবা কিভাবে বিকাশ ডিপিএস বাতিল করবেন এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানুন আজকের পোস্টে।
বিকাশ ডিপিএস কি
বিকাশ ডিপিএস হলো: Bkash অ্যাপের মাধ্যমে পরিচালিত একটি ডিজিটাল সঞ্চয় সেবা প্রকল্প। যা গ্রাহকদের সাপ্তাহিক বা মাসিক ভিত্তিতে টাকা জমানোর সুযোগ দেয়। ডিপিএস নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর গ্রাহক চাইলে মুনাফাসহ জমাকৃত টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
বিকাশ ডিপিএসের মাধ্যমে একজন গ্রাহক চাইলে সাপ্তাহিক ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫,০০০ টাকা বা মাসিক ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ৬ মাস থেকে চার বছর মেয়াদি টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন।
বিকাশ ডিপিএস খোলার নিয়ম
বিকাশ ডিপিএস খোলার জন্য সর্বপ্রথম আপনার মোবাইল ফোনের ডাটা সংযোগ চালু করুন। তারপর আপনার মোবাইলে থাকা Google play store অ্যাপসটি ওপেন করুন এবং সার্চ অপশনে Bkash লিখে সার্চ করুন। তারপর সার্চ রেজাল্টে আসা বিকাশ অ্যাপসটি ইন্সটল করুন।
এখন বিকাশ অ্যাপসটি সম্পূর্ণ ইনস্টল হওয়ার পরে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করুন। তারপর আপনার বিকাশ একাউন্টে লগইন করুন। এখন বিকাশের হোম পেইজে প্রবেশ করলে সেখানে অনেকগুলো অপশন দেখতে পাবেন। যেমন:
- সেন্ড মানি
- মোবাইল রিচার্জ
- ক্যাশ আউট
- পেমেন্ট
- অ্যাড মানি
- পে-বিল
- সেভিংস
- লোন
- ইন্সুরেন্স এবং
- রিকুয়েস্ট মানি ইত্যাদি
বিকাশ ডিপিএস খোলার জন্য “সেভিংস” অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে আপনাকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে এবং সেখানে সম্পুর্ন নতুন একটি ইন্টারফেস ওপেন হবে। এখন “নতুন সেভিংস খুলুন” অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে পরবর্তী অপশনে দুটি অপশন দেখতে পাবেন। যেমন:
- ডিপিএস/মুনাফা ভিত্তিক এবং
- ইসলামিক ডিপিএস/শরিয়াহ ভিত্তিক
এখন আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী ডিপিএস মুনাফা অপশন সিলেক্ট করুন। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি ডিপিএস/মুনাফা ভিত্তিক DPS খুলতে চাচ্ছেন। তাহলে ডিপিএস অপশনটি সিলেক্ট করলে এমন একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন।
এখন আপনি কেন সেভিংস একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন। সেটি সিলেক্ট করুন। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি ভবিষ্যত প্রয়োজনে Bkash DPS একাউন্ট খুলবেন। তাহলে “ভবিষ্যৎ প্রয়োজন” অপশনটি সিলেক্ট করুন। এখন পরবর্তী অপশন থেকে ডিপিএসের মেয়াদ, ডিপিএস এর ধরন এবং টাকার পরিমাণ সিলেক্ট করুন।
আরোও পড়ুন: মাত্র ১০ মিনিটেই বিকাশ থেকে লোন নিন ২০২৫
তাহলে নিচে আপনার বিকাশ একাউন্টের ব্যালেন্স দেখতে পাবেন। এখন আপনাকে যে কাজটি করতে হবে। সেটি হচ্ছে: নিচে থেকে “এগিয়ে যান” অপশনটিতে ক্লিক করুন। তাহলে আপনাকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে এবং সেখানে এমন একটি ইন্টারফেস ওপেন হবে।
এখানে আপনি কোন কোন ব্যাংক Bkash DPS সার্ভিস দিচ্ছে। সেই সকল ব্যাংকের নাম দেখতে পাবেন। যেমন: IDLC, BRAC Bank করতে Dhaka bank ইত্যাদি। তাছাড়াও প্রত্যেকটি ব্যাংকের পাশে সেই ব্যাংকের মুনাফার হার দেখতে পাবেন। এখন আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী ব্যাংক একাউন্ট সিলেক্ট করুন।
তাহলে পরবর্তী অপশনে “পূর্ববর্তী কোন নমিনি ইনফরমেশন পাওয়া যায়নি” লেখা দেখতে পাবেন। এখন আপনার বিকাশ একাউন্টে যদি আগে থেকে নমিনির তথ্য সেটআপ করা না থাকে। তাহলে “নতুন নমিনি যোগ করুন” অপশনে ক্লিক করে আপনার নমিনির তথ্য এড করুন।
এখন পরবর্তী অপশনে সেভিংসের বিস্তারিত তথ্য দেখতে পাবেন। যেমন: মোট জমার একাউন্ট, সম্ভাব্য মুনাফার হার, সম্ভাব্য মোট প্রদান এবং ম্যাচিউরিটির তারিখ ইত্যাদি। এখন আপনি নিচে থেকে “এগিয়ে যান” অপশনটিতে ক্লিক করুন। তারপর পরবর্তী অপশনে আপনার বিকাশ একাউন্টের পিন নম্বরটি বসিয়ে পাশের টিক চিহ্নে ক্লিক করুন।
তারপর পরবর্তী অপশন থেকে “সেভিংস করতে ট্যাব করে ধরে রাখুন” অপশনে ক্লিক করে ট্যাপ করে ধরে রাখুন। তাহলে আপনাকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে এবং সেখানে আপনার সেভিংস রিকুয়েস্ট করা হয়েছে! লেখাটি দেখতে পাবেন। তাহলে বুঝবেন আপনার Bkash DPS একাউন্ট খোলা সম্পন্ন হয়েছে।
বিকাশ ডিপিএস করতে কি কি লাগে
আপনি যদি বিকাশ ডিপিএস একাউন্ট তৈরি করতে চান। তাহলে অবশ্যই Bkash DPS একাউন্ট খোলার সময় নিম্নের ডকুমেন্ট গুলো প্রয়োজন হবে। যেমন:
- Bkash DPS একাউন্ট খোলার জন্য আপনার নামে Active বিকাশ একাউন্ট থাকতে হবে
- আপনার Bkash Account এর সাথে সংযুক্ত Name এবং NID তথ্য যাচাই করা হবে
- আপনি যে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে বিকাশ একাউন্ট খুলেছেন। সেই মোবাইল নম্বরে সব তথ্য ও কনফরমেশন যাচাই করা হবে এবং
- যেহেতু Bkash DPS একটি মাসিক কিস্তি। তাই আপনাকে প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা করতে হবে
বিকাশ ডিপিএসের সুবিধা
বিকাশ ডিপিএসের সুবিধা গুলো নিচে আলোচনা করা হলো:
- Bkash অ্যাপ থেকে খুব সহজেই ডিপিএস খোলা যায় এবং বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে কিস্তি পরিশোধ করা যায়
- বিকাশে মাত্র 500 টাকা দিয়ে কিস্তি শুরু করা যায়
- বিকাশ জিপিএস ব্যাংকের সাথে সংযুক্ত থাকার কারণে টাকা নিরাপদে লেনদেন করা যায়
- বিকাশ অ্যাপস থেকে কিস্তির তারিখ এবং মেয়াদ ইত্যাদি ঠিক করা যায় এবং
- নির্দিষ্ট সময় পর বিকাশ DPS থেকে ভালো মুনাফা পাওয়া যায়
বিকাশ ডিপিএসের অসুবিধা
বিকাশ ডিপিএসের অসুবিধা গুলো নিচে আলোচনা করা হলো:
- মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে Bkash DPS বন্ধ করলে মুনাফা কম বা কোনো প্রকারের মুনাফা নাও হতে পারে
- নির্ধারিত তারিখে আপনার বিকাশ একাউন্টে টাকা না থাকলে কিস্তি মিস হতে পারে
- বাংলাদেশের ব্যাংকের তুলনায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুনাফার হার কম হতে পারে
- যাদের বিকাশ একাউন্টে নিয়মিত এবং লেনদেন হয় না। তাদের ক্ষেত্রে বিকাশ ডিপিএস টিকিয়ে রাখা কঠিন
বিকাশ ডিপিএস এর মুনাফার হার
বর্তমান সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান/ব্যাংকের মুনাফার হার ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যেটি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হতে পারে। নিচে কয়েকটি ব্যাংকের DPS মুনাফার হার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড মুনাফার হার
প্রত্যেকটি ব্যাংকের মুনাফার হার প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয় এবং সময়ের সাথে সাথে মুনাফার হার পরিবর্তন হতে পারে। আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড মুনাফার হার জানতে সরাসরি আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করুন।
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড মুনাফার হার
প্রত্যেকটি ব্যাংকে মুনাফার হার নির্দিষ্ট মেয়াদে নির্ধারণ করা থাকে এবং ব্যাংকের শর্তাবলী অনুযায়ী মুনাফার হার হয়ে থাকে। আপনি যদি ঢাকা লিমিটেড মুনাফার হার জানতে চান। তাহলে সরাসরি ঢাকা ব্যাংকের লিমিটেড ব্যাংকে যোগাযোগ করুন।
বিকাশ ডিপিএস বাতিল করার নিয়ম
বিকাশ ডিপিএস বাতিল করার জন্য সর্বপ্রথম আপনার বিকাশ একাউন্টে লগইন করুন। তারপর সেখান থেকে সেভিংস অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে আপনাকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে এবং সেখানে এমন একটি ইন্টারফেস ওপেন হবে।
এখন আপনি “সচল” অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে পরবর্তী অপশনে আপনার সেভিংস গুলো দেখতে পাবেন। এখন আপনাকে যে কাজটি করতে হবে। সেটি হচ্ছে: আপনার সেভিংস এর উপর ক্লিক করুন। তারপর পরবর্তী অপশন থেকে স্ক্রোল করে নিচে নামুন। তাহলে “সেভিংস বাতিল” অপশন দেখতে পাবেন সেখানে ক্লিক করুন।
আরোও পড়ুন: ফ্রি টাকা ইনকাম বিকাশ পেমেন্ট দৈনিক ২০০-৩০০ টাকা 2025
এখন পরবর্তী অপশনে আপনার বর্তমান ব্যালেন্স সহ মুনাফা হার দেখতে পাবেন। সেভিংস বাতিল করার জন্য নিচে থেকে “আমি নিশ্চিত করুন” অপশনে ক্লিক করুন। তারপর পরবর্তী অপশনে আপনার বিকাশ একাউন্টের পিন নম্বরটি বসিয়ে দিন। এখন পরবর্তী অপশন থেকে “সেভিংস বাতিল করতে ট্যাপ করে ধরে রাখুন” অপশনে ট্যাপ করে ধরে রাখুন।
তাহলে আপনাকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে এবং সেখানে “আপনার সেভিংস বাতিল রিকোয়েস্ট…. সাবমিট করা হয়েছে” লেখা দেখতে পাবেন। এখন বিকাশ থেকে আপনার মোবাইল নম্বরে একটি এসএমএস পাঠানো হবে এবং সেখানে আপনার সেভিংস বাতিল করার টাকা কখন পাবেন। সেটি দেখতে পাবেন।
সাধারণত ১২-২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনার বিকাশ একাউন্টে আপনার সেভিংসের টাকাটি পেয়ে যাবেন। তারপর বিকাশ একাউন্ট থেকে আপনার সেভিংসের টাকা উইথড্র করতে পারবেন। আশা করি, আজকের পোস্টটি পড়ে জানতে পেরেছেন। বিকাশ ডিপিএস সম্পর্কে। এরকম আরোও গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট পেতে চোখ রাখুন বঙ্গভাষা ওয়েবসাইটে ধন্যবাদ!