কুইজ খেলে ইনকাম প্রতিদিন ২০০/৩০০ টাকা। অথবা সহজ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে জিতে নিন হাজার হাজার টাকা। এমন অসংখ্য ভিডিও ও পোস্ট দেখা যায় YouTube ও Facebook সহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে। কিন্তু আসলে কি কুইজ খেলে প্রতিদিন 200 থেকে 300 টাকা ইনকাম করা সম্ভব? বা Quiz khela কিভাবে ইনকাম করা যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
কুইজ খেলে ইনকাম প্রতিদিন ২০০/৩০০ টাকা
আমরা সকলেই অনলাইন থেকে ইনকাম করতে চাই। কিন্তু সঠিক ইনকাম করার প্রক্রিয়া না জানার কারণে আমরা ইউটিউব ও ফেসবুকের শরণাপন্ন হই। যার ফলে অনেক অসাধু কনটেন্ট ক্রেয়েটার্সরা সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমাদের হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
আপনি যদি ইউটিউবে গিয়ে কুইজ খেলে ইনকাম লিখে সার্চ করেন তাহলে এই সম্পর্কে অনেক ভিডিও টিউটোরিয়াল পেয়ে যাবেন যেগুলো দেখে আপনি সত্যিই মনে করবেন। যার কারণ অনেক বড় বড় ইউটিউবাররাও এই ধরনের ভিডিও তৈরি করে থাকে। আবার অনেকেই বড় বড় ইউটিউবারদের ছবি, থামলেন, প্রোফাইল বা চ্যানেলের নাম ব্যবহার করে এ ধরনের ভিডিও তৈরি করে থাকে।
কিন্তু আপনি হয়তো জানলে অবাক হবেন সত্যিকার অর্থে কুইজ খেলে ইনকাম করা কখনোই সম্ভব না। তবে আপনি যদি সরকারি বিভিন্ন কুইজে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হতে পারেন তাহলে পুরস্কার জিতে নিতে পারবেন। যেমন: শেখ রাসেল অনলাইন কুইজ অথবা স্মার্ট বাংলাদেশ অনলাইন কুইজ ইত্যাদি।
কুইজ খেলে ইনকাম করা কেন সম্ভব না
কুইজ খেলে ইনকাম করা এই কারণেই সম্ভব না কারণ যারা এসব কুইজ ওয়েবসাইট বা অ্যাপস তৈরি করেন তারা সাধারণত নিজেরাও ইনকামের উদ্দেশ্যে এসব কুইজ অ্যাপ বা ওয়েবসাইট তৈরি করে থাকেন। এদের মধ্যে অনেক ছোটখাটো ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন যারা এসব অ্যাপস তৈরি করে গুগল এডসেন্স অথবা গুগল এডমোভ থেকে ইনকাম করে থাকেন।
আপনি যদি ফ্রিতে কুইজ খেলে ইনকাম করতে চান তাহলে তাদের এসব অ্যাপস বা ওয়েবসাইটে কাজ করতে পারেন কিন্তু এদের মধ্যে অধিকাংশ কুইজ অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে কাজ করে আপনি দৈনিক ১০ টাকাও ইনকাম করতে পারবেন না। কারণ এসব বাংলাদেশি কুইজ অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মালিকদের দৈনকি ১$/২$ বেশি ইনকাম হয় না।
সুতারাং আপনি যদিা তাদের সাথে কাজ করেন। তাহলে তারা আপনাকে সরাসরি টাকা না দিয়ে পয়েন্ট দিবে যেটার মূল্য অনেক কম। অর্থাৎ ১০০০ পয়ন্ট সমান ১০ টাকা। যেটি ইনকাম করতে আপনাকে অনেক বেশি কুইজ খেলতে হবে। আর ১০০০ পয়ন্ট করতে আপনার দুই থেকে তিনদিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। প্রকৃতপক্ষে এসব কুইজ অ্যাপসে কাজ করে আপনি নিজের ফোনের এমবি টাকাটাও উঠাতে পারবেন না।
সাধারণত, এসব কুইজ অ্যাপসের মালিকেরা ইউটিউবারদের তাদের অ্যাপস নিয়ে ভিডিও বানানোর জন্য দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পেমেন্ট করে থাকে। আর একজন ইউটিউবার যেহেতু টাকা ইনকাম করার জন্যই ইউটিউবিং করছেন। সুতরাং তিনি কোন কিছু চিন্তা ভাবনা করেই এ ধরনের ভিডিও তৈরি করতে সম্মত হয়ে যায়।
আর এভাবে আপনি ইউটিউব থেকে ভিডিও দেখে সেসব অ্যাপস ব্যবহার করে কিছুদিন কুইজ খেলার পর সেগুলো ডিলিট করে দেন। যদিও এতে আপনার কোন ধরনের ইনকাম হয় না। কিন্তু যিনি এই কুুইজ অ্যাপের মালিক তিনি আপনাকে দিয়ে কমপক্ষে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করে নেয়। আবার ইউটিউবার এই ধরনের ভিডিও তৈরি করে তার পকেট ভরিয়ে নেয়। কিন্তু আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে এসব অ্যাপ এ কাজ করে আপনার সময় অপচয় করে ঠকে যান।
বড় কুইজ অ্যাপে কাজ করে ইনকাম
এখন আপনাদের ভিতরে অনেকে বলতে পারেন আমরা বড় কুইজ অ্যাপ এ কাজ করে পেমেন্ট পেতে অনেককে দেখেছে। আবার অনেকে ইউটিউবার সরাসরি এসব কুইজ অ্যাপ থেকে লাইভ উইথড্র দিয়ে দেখিয়েছে। তাহলে সেগুলো কি করে সম্ভব?
আপনি এটিও জানলে হয়তো অবাক হবেন যে, যখন মার্কেটে কোন বড় কুইজ বা বড় কোম্পানি আসে তখন তারা শুরুতেই মার্কেটে কিছু টাকা ইনভেস্ট করে থাকে। আর আপনি যখন সেসব অ্যাপসে কুইক খেলেন তখন শুরু দিকে তারা আপনাকে কিছু পেমেন্ট করবে। কিন্তু যখন তাদের সেসব অ্যাপ্সের অনেক বেশি পরিমাণে ওয়ার্কার তৈরি হয়ে যাবে। তখন তারা সেখানে ইনভেস্টমেন্ট এর কথা বলে।
অর্থাৎ আপনি এখানে কাজ করতে হলে আপনাকে সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা বা ৫০০ টাকা ডিপোজিট করতে হবে। আর এভাবে যখন আপনারা অনেকে একসাথে অনেক বেশি পরিমাণ অর্থ ডিপোজিট করে ফেলেন তখন এসব কোম্পানি তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয় এবং নেট জগৎ থেকে হারিয়ে যায়। এভাবে তারা শুরুর দিকে মার্কেটে এক থেকে দু লাখ টাকা ইনভেস্ট করে। একটা সময় গ্রাহকদের লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যায়।
কিছুদিন পর তারা অন্য নামে অন্য ডিজাইনে তাদের সেসব অ্যাপ বা ওয়েবসাইট তৈরি করে আবারো মার্কেটে আর এভাবে তারা বছর পর বছর গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিয়ে থাকে।
এখন অনেকে বলতে পারেন তাহলে বড় বড় ইউটিউবাররা কেন তাদের প্রমোট করে থাকে? এখন আমি ২টি বিষয়ে বলব। ১ম/ যখন শুরুতেই এসব কম্পানি পেমেন্ট করে তখন তারা তাদের বিশ্বাস করে কনটেন্ট তৈরি করে থাকে। আর ২য়/ এসব কম্পানির রেফারাল প্রোগ্রামে অনেক বেশি পরিমানে কমিশন দিয়ে থাকে। যার ফলে বড় ইউটিউবাররা এদের নিয়ে ভিডিও তৈরি করে থাকে।
এখন অনেকেই ইউটিউবারদের লাইভ উইথড্র দেখানোর কথা বলে থাকবেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলে রাখা ভালো। এসব কোম্পানি সাধারণত বড় বড় ইউটিউবারদের অনেক বেশি পরিমাণে অর্থ দিয়ে ভিডিও তৈরি করার বা তাদের প্রমোট করার কাজগুলো দিয়ে থাকে।
তখন তারা চালাকি করে ইউটিউবারদের সরাসরি পেমেন্ট না করে সেসব অ্যাপস বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেমেন্ট করে থাকে। যাতে করে ইউটিউবাররা লাইভ উইথড্র দিয়ে তাদের বিশ্বস্ততা প্রমাণ করতে পারে।
এভাবে মূলত ইউটিউবার ও প্রতারক চক্র বিভিন্নভাবে চালাকি করে সাধারণ মানুষদের ঠকিয়ে হাজার হাজার টাকা আত্মসাৎ করে নেয়।
ইসলামী দৃষ্টিতে কুইজ খেলে ইনকাম
কিছু কিছু ক্ষেত্রে কুইজ খেলে ইনকাম ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। ওইসব কুইজ খেলে ইনকাম ইসলামের দৃষ্টিতে জায়েজ নয় যে সব কুইজে অর্থ ইনভেস্টে বা ডিপোজিট করতে হয়। কারণ অর্থ ডিপোজিট করে সেখান থেকে লাভ নেওয়া আর সুদ গ্রহণ করার মাধ্যমে কোন পার্থক্য নেই। তবে ফ্রিতে বা পরিশ্রমের বিনিময় কুইজ খেলে ইনকাম করলে তা জায়েজ হবে। সুতারাং মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত এসব হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা। অন্যথায় এসব সামান্য অর্থের বিনিময় গুনাহগার হবেন।
আসুন সঠিক ফ্রিল্যান্সিং পেশা গ্রহণ করে ইমন ও আমল দুটিকে হেফাজত করি। অনলাইন থেকে হালাল উপায় অর্থ উপার্জন করতে চাইলে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ!