জি আই পণ্য তালিকা ২০২৪ | জি আই পণ্য কি? ও সর্বশেষ জিআই পণ্য কোনটি

জি আই পণ্য তালিকা, জি আই পণ্য কি? ও সর্বশেষ জি আই পণ্য কোনটি এ নিয়ে বিস্তারিত জানুন আজকের পোস্টে। আপনারা যারা GI পণ্য সম্পর্কে মোটেও কিছু জানেন না। তারাও এই পোস্টটি পড়ে জিআই পণ্য সম্পর্ক বিস্তারিত জানতে পারবেন। 

 

জি আই পণ্য কি?

জি আই হলো- Geographical indication বা ভৌগলিক নির্দেশক। জি আই এক ধরনের ভৌগলিত নির্দেশক চিহ্ন যা কোন পণ্যের উৎপত্তিস্থলের কারণের গুণাবলী বা খ্যাতি বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। যেমন: শহর, অঞ্চল বা দেশ GI এ অন্তর্ভুক্ত থাকে। 

আরোও পড়ুন: মোবাইলে তোলা ছবি বিক্রি করে প্রতিদিন ইনকাম ৫০০ টাকা

সহজ ভাষায় জি আই হলো: এমন সব পণ্য যা নির্দিষ্ট দেশ, অঞ্চল বা শহর ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে অন্যকোথাও উৎপাদন করা সক্ষম নয়। বাংলাদেশে ইতিপূর্বে ৯টি জি আই পণ্য থাকলেও সম্প্রতি সর্বশেষ জিআই পণ্য হিসেবে বাগদা চিংড়িকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বর্তমান দেশে ১০টি জি আই পণ্যের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো: 

  1. জামদানি
  2. বাগদা
  3. ইলিশ
  4. খিরসাপাতি
  5. সিল্ক
  6. সাদা মাটি
  7. কাটারীভোগ
  8. শতরঞ্জি
  9. কালোজিরা
  10. মসলিন 

 

বাণিজ্যিক খাতে জিআই পণ্য

কোন পণ্য জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেলে সেটিকে বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানি করা হয়। এতে করে দেশ আর্থিকভাবে সচ্ছল হয় এবং বহি বিশ্বে পণ্যগুলোর আলাদা একটি কদর থেকে। অন্যদিকে ওই অঞ্চল বাণিজ্যিকভাবে পণ্যটি উৎপাদন করা আইনি বৈধতা লাভ করে।

কোন নির্দিষ্ট স্থান বা অঞ্চলের কোন পণ্য খুব নামকরা হলে, সেই নামের উপর বিশ্বাস করে পণ্যটি ক্রয় বিক্রয়ের গুরুত্ব দিতে জিআই সনদ দেওয়া হয়। প্রতিটি পণ্যের সাথে তার উৎপত্তিস্থলের নাম যুক্ত করা হয়। যেমন: পদ্মার ইলিশ, ঢাকায় জামদানি, ঢাকাই মসলিন, রংপুরের শতরঞ্জি ইত্যাদি। 

ঢাকায় জামদানি: এক সময় ঢাকা শহরের খ্যাতি ছিল। এটি সুধু ঢাকার কারিগররাই উৎপাদন করতে পারতো। বলা চলে ঢাকার আবহাওয়া জামদানি তৈরির জন্য উপযোগী। তাই যুগের পর যুগ ঢাকার কারিগররা জামদানি উৎপাদন করে আসছে। যা পৃথিবী জুড়ে স্বীকৃত। 

 

জি আই পণ্য তালিকাজিআই পণ্য নামকরণ ও ইতিহাস

বাংলাদেশে সর্বমোট ১০টি পণ্য জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সর্বশেষ স্বীকৃতি প্রাপ্ত জিআই পণ্য হলো বাগদা চিংড়ি। বাংলাদেশের কোন জি আই পণ্য কোন অঞ্চলের জন্য বিখ্যাত চলুন জেনে নেওয়া যাক। 

২০১৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম বারের মতো জি আই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল জামদানি কাপড়। যা ঢাকার ঐতিহ্য। এরপর ২০১৭ সালে  

পদ্মার ইলিশ, ২০১৯ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাতি আম, ২০২০ সালে ঢাকাই মসলিন, ২০২১ সালে রাজশাহী সিল্ক।

আরোও পড়ুন: যেকোন অপারেটরে ৩৫ পয়সা মিনিট কথা বলুন।

এরপর থেকে ক্রমন্বয়ে ২০২২ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরের কাটারীভোগ, নেত্রকোনার সাদা মাটি, রংপুরের শতরঞ্জি, কালিজিরা চাল ও বাগদা চিংড়িসহ মোট ১০টি পণ্য বাংলাদেশের জিআই পণ্যে অর্ন্তভূক্ত হয়েছে। যা বাংলাদেশের নিজেস্ব পণ্য হিসেবে বহিঃবিশ্বে স্বীকৃতি পাবে।

 

স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জি আই পণ্য ও উৎপত্তিস্থলের বর্ণনা 

এ পর্যায়ে জেনে নেওয়া যাক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জি আই পণ্যের উৎপত্তিস্থলের বিবরণ সম্পর্কে। 

  1. বাংলাদেশের প্রথম স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জিআই পণ্য হলো জামদানি কাপড়। যা নিবন্ধিত হয় ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ এবং সনদ প্রাপ্তি হয় ১৭ নভেম্বর ২০১৬ সালে। জামদানি কাপড় সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন।
  2. বাংলাদেশের দ্বিতীয় ধাপে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জিআই পণ্য হলো পদ্মার ইলিশ। এটি নিবন্ধিত হয় ১৩ নভেম্বর ২০১৬ এবং সনদ প্রাপ্তি হয় ১৭ আগস্ট ২০১৭। পণ্যটির সনদপ্রাপ্ত হয় বাংলাদেশ মৎস্য অধিদফতর।
  3. বাংলাদেশের তৃতীয় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জিআই পণ্য হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম। যা নিবন্ধিত হয় ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ এবং সনদ প্রাপ্তি হয় ২৭ জানুয়ারি ২০১৯। এটির সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
  4. বাংলাদেশের চতুর্থ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জিআই পণ্য হলো বিজয়পুরের সাদা মাটি। যা নিবন্ধিত হয় ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ এবং সনদ প্রাপ্তি হয় ১৭ জুন ২০২১। এটির সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান নেত্রকোনা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়।
  5. বাংলাদেশের পঞ্চম স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জিআই পণ্য হলো দিনাজপুরের কাটারীভোগ। যা নিবন্ধিত হয় ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ এবং সনদ প্রাপ্তি হয় ১৭ জুন ২০২১। এটির সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট।
  6. বাংলাদেশের ষষ্ঠ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জিআই পণ্য হলো কালিজিরা। যা নিবন্ধিত হয় ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ এবং সনদ প্রাপ্তি হয় ১৭ জুন ২০২১। এটির সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট।
  7. বাংলাদেশের সপ্তম স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জিআই পণ্য হলো রংপুরের শতরঞ্জি। যা নিবন্ধিত হয় ১১ জুলাই ২০১৯ এবং সনদ প্রাপ্তি ১৭ জুন ২০২১। এটির সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প।
  8. বাংলাদেশের অষ্টম স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জিআই পণ্য হলো রাজশাহী সিল্ক। যা নিবন্ধিত হয় ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ এবং সনদ প্রাপ্তি ১৭ জুন ২০২১। এটির সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড।
  9. বাংলাদেশের নবম স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জিআই পণ্য হলো ঢাকাই মসলিন। যা নিবন্ধিত হয় ২ জানুয়ারি ২০১৮ এবং সনদ প্রাপ্তি ১৭ জুন ২০২১। এটির সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড।
  10. বাংলাদেশের দশম স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জিআই পণ্য হলো বাগদা চিংড়ি। যা নিবন্ধিত হয় ৪ জুলাই ২০১৯ এবং সনদ প্রাপ্তি ২৪ এপ্রিল ২০২২। এটির সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মৎস্য অধিদফতর।

এছাড়াও বাংলাদেশের আরেকটি পণ্য জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। তাহলো ফজলি আম। তবে এখন পর্যন্ত এটি জিআই সনদ পায়নি।

 

জি আই পণ্য তালিকা

বাংলাদেশের জি আই পণ্যের তালিকা  

আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের সর্ব মোট দশটি জিআই পণ্য স্বীকৃতি পেয়েছে সেগুলো হল: 

  1. জামদানি শাড়ী
  2. বাগদা চিংড়ি
  3. ইলিশ মাছ
  4. খিরসাপাতি আম
  5. সিল্ক কাপড়
  6. সাদা মাটি 
  7. কাটারীভোগ
  8. শতরঞ্জি
  9. কালোজিরা চাল
  10. মসলিন কাপড়

তবে দেশের অভ্যন্তরের বেশ কিছু পণ্য জিআই পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যেমন: 

  1. বগুড়ার দই 
  2. নাটোরের কাঁচাগোল্লা 
  3. কুমিল্লার রসমালাই 
  4. টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম
  5. কুষ্টিয়ার তিলের খাজা 
  6. যশোরের খেজুরের গুড় 
  7. শেরপুরের তুলসীমালা ধান
  8. শীতলপাটি 
  9. ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল 
  10. রাজশাহীর মিষ্টি পানি 
  11. টাঙ্গাইলের শাড়ি ইত্যাদি।

 

দেশের অভ্যন্তরী জিআই পণ্য

বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় বিভিন্ন পণ্য জিআই পণ্যের মতই বিখ্যাত। যেগুলা নিম্নে তুলে ধরা করা হলো যেমন:

  1. কুমিল্লা – রসমালাই
  2. কক্সবাজার – মিষ্টিপান
  3. পিরোজপুর – পেয়ারা, আমড়া, ডাব
  4. কিশোরগঞ্জ – পিঠা, বালিশ মিষ্টি
  5. কুষ্টিয়া – তিলের খাজা
  6. খাগড়াছড়ি –হলুদ
  7. খুলনা – সন্দেশ
  8. গাইবান্ধা – রসমঞ্জরী
  9. গাজীপুর – কাঁঠাল
  10. গোপালগঞ্জ -বাদাম
  11. চট্টগ্রাম – মেজবান, শুটকি
  12. চাঁদপুর – ইলিশ
  13. চাঁপাইনবাবগঞ্জ – আম
  14. শিবগঞ্জের – চমচম
  15. চুয়াডাঙ্গা – পান
  16. জামালপুর – ছানার পোলাও
  17. ঝালকাঠী – লবন
  18. ঝিনাইদাহ – হরি
  19. টাঙ্গাইল – চমচম
  20. ঠাকুরগাঁও – সূর্য্যপুরী আম
  21. দিনাজপুর – লিচু, পাপড়
  22. ঢাকা – মসলিন
  23. নওগাঁ – প্যারা সন্দেশ
  24. নরসিংদী – সাগর কলা
  25. নড়াইল – পেড়ো সন্দেশ, খেজুর রস
  26. নাটোর – কাঁচাগোল্লা
  27. নেত্রকোনা – বালিশ মিষ্টি
  28. নীলফামারী – ডোমারের সন্দেশ
  29. নোয়াখালী – নারকেল নাড়ু়
  30. পাবনা – মানসিক হাসপাতাল, সন্দেশ প্যারডাইসের প্যারা
  31. ফরিদপুর – খেজুরের গুড়
  32. ফেনী – মহিশের দুধের ঘি
  33. বগুড়া – দই
  34. বরিশাল – আমড়া
  35. বাগেরহাট – চিংড়ি
  36. বান্দরবন – হিল জুস
  37. ব্রাহ্মণবাড়িয়া – তালের বড়া
  38. ভোলা – মহিষের দুধের দই
  39. ময়মনসিংহ – মুক্তা গাছার মন্ডা
  40. মাগুরা – রসমালাই
  41. মাদারীপুর – খেজুর গুড়
  42. মানিকগঞ্জ – খেজুর গুড়
  43. মুন্সীগঞ্জ -ভাগ্যকুলের মিষ্টি
  44. মেহেরপুর – মিষ্টি সাবিত্রি
  45. যশোর – খই
  46. রংপুর – আখ (ইক্ষু)
  47. রাঙ্গামাটি – আনারস 
  48. রাজবাড়ী – চমচম
  49. রাজশাহী – আম
  50. লক্ষ্মীপুর – সুপারি
  51. শেরপুর – পায়েস, ছানার চপ
  52. সাতক্ষীরা – সন্দেশ
  53. সিরাজগঞ্জ – পানিতোয়া
  54. নারায়ণগঞ্জ- আমের আচার
  55. সিলেট – সাতকড়ার আচার, কমলালেবু

আশি করি, লেখা গুলো পড়ে জি আই পণ্য কি? জি আই পণ্য তালিকা ও সর্বশেষ জিআই পণ্য কোনটি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এরকম আরোও গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট পেতে চোখ রাখুন বঙ্গভাষা ওয়েবসাইটে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from বঙ্গভাষা

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading